ক্রাইম টিভি বাংলা অনলাইন ডেস্ক…ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন পাওয়া গেছে। গত প্রায় সোয়া এক বছর বিশ্বের কয়েক হাজার ধরনের রূপান্তরিত করোনাভাইরাসের দেখা মিললেও ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাসের দেখা মিলল এই প্রথম। দেশটির ১৮টি রাজ্যে একই সময়ে একই দুই ধরনের রূপান্তর হওয়ার করোনাভাইরাস পেয়েছে ইন্ডিয়ান সার্স-কোভি-২ জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ধরনের এ ভাইরাস খুব সহজেই মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে।
গতকাল বুধবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই ১৮ রাজ্য থেকে সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে ৭৭১ জনের মধ্যে ওই নতুন ধরনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। তবে নতুন এ ভ্যারিয়েন্টের কারণেই দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করেনি ভারত সরকার। তবে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু রাজ্যে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে বিভিন্ন বৈচিত্র্য দেখা গেছে। নতুন ধরনের করোনাভাইরাসটি যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্ট থেকে সেটি আলাদা প্রকৃতির। এর দুবার মিউটেশন ঘটেছে।
এ ব্যাপারে ভারতের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট শহিদ জামিল জানিয়েছেন, ভাইরাসের এ ধরনের মধ্যে দুটি রূপান্তর যুগপৎ সংগঠিত হয়েছে। এল৪৫২আর এবং ই৪৮৪কিউ মিউটেশন এই সঙ্গে ঘটেছে ভারতে পাওয়া নতুন ভাইরাসটির মধ্যে। এ কারণে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন শক্তিশালী হবে। যা খুব সহজেই মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে কোষের মধ্যে ঢুকে পড়বে। এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ করার ক্ষমতা ও প্রাণহানি ঘটানোর সক্ষমতা অনেক বেশি হতে পারে।
শহিদ জামিল বলেন, নতুন ভাইরাসটির দিকে আমাদের এখন থেকে খুবই নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে। এর পুরো চরিত্র বুঝতে হয়তো আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। আবিষ্কার হওয়া করোনার টিকা এর ক্ষেত্রে কাজ করে কি না সেটিও গবেষণার আওতায় আনতে হবে।
শনাক্ত সাড়ে ১২ কোটি, মৃত্যু সাড়ে ২৭ লাখ : চলতি মার্চ মাস থেকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যেই দেশে দেশে শনাক্ত হচ্ছে করোনার নতুন নতুন ধরন। গতকাল বুধবার ভারত জানিয়েছে, তাদের দেশে দুই ধরনের বৈশিষ্ট্যের রূপান্তর হওয়া করোনার নতুন ধরন পাওয়া গেছে। করোনার টিকার মধ্যেই রোগী শনাক্তের এই উল্লম্ফন এবং করোনার নতুন নতুন ধরন বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডমিটারসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার রাত ৯টা অবধি বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১২ কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৪ জন। মারা গেছে ২৭ লাখ ৪৯ হাজার ১১৭ জন। এই সময়ের মধ্যে আক্রান্তদের মধ্যে সেরে উঠেছে ১০ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি।
ওয়ার্ল্ডমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮৩ জন মারা গেছে। এছাড়া করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩৪ জন। বিশ্বে শনাক্তের দিক দিয়ে এটিই কোনো দেশে সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃত্যু বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে ব্রাজিল। আক্রান্ত এবং মৃত্যু বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৫ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৩ জনের।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। এশিয়ার মধ্যে ভারতই হচ্ছে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ। ভারতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯৪ জন। আর মারা গেছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৭৭ জন।
এরপর রয়েছে যথাক্রমে রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, তুরস্ক ও জার্মানি। তবে মৃত্যুর হিসাবে ব্রাজিলের পরেই আছে মেক্সিকো। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ২২ লাখ ৩ হাজারের কিছু বেশি রোগী। কিন্তু মারা গেছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৮ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশটিতে করোনায় প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। ওই বছরেরই ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।