©ক্রাইম টিভি বাংলা অনলাইন ডেস্ক ♦
হলিউডের বদৌলতে ডাইনোসরের কথা ভাবলেই মাথায় আসে প্রকাণ্ড এক জন্তুর কথা। তবে হলিউডেরও দোষ নেই; এতদিন এই প্রাণির যত কঙ্কাল বা হাড় পাওয়া গেছে, তাতে বিশালাকার প্রাণির অবয়বই দেখা গেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায় ১১ কোটি বছর আগে প্রাচীন এক হ্রদের উপকূলে- বর্তমান ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাস করতো মুরগির সমান, দোপেয়ো ডাইনোসর। এরা জীবনধারণ করতো পোকামাকড় বা ব্যাঙ ও টিকটিকির মতো প্রাণী খেয়ে। সম্প্রতি ক্রেটাসিয়াস গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মঙ্গলবার বিজ্ঞানীরা জানান, ডাইনোসরটি সাধারণ ডাইনোসরের মতোই ছিল। অস্থি কলার গঠন ছিল পূর্ববর্তী জুরাসিক যুগের ছোট ডাইনোসরগুলোর মতোই। কিন্তু বাইরের দিক দিয়ে ছিল একেবারেই ভিন্ন।
বিজ্ঞানীরা ডাইনোসটির নাম দিয়েছেন উবিরাজরা জুবাতাস।
এর বাইরের দিকে চুলের মতো দেখতে কিছু তন্তু ছিল। এছাড়া, কাধের দিকে দু’টি একেবারেই শক্ত তবে ফিতার মতো অঙ্গও ছিল। খুব সম্ভবত সেগুলো কেরাটিন দিয়ে তৈরি। প্রসঙ্গত, চুল ও নখের প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন।
উবিরাজরা জুবাতাস নিয়ে করা গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ এর পেলোবায়োলজি বিষয়ক অধ্যাপক ড্যাভিড মার্টিল। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক অদ্ভুত ডাইনোসর ছিল, তবে এটি একেবারেই অন্যরকম।
উবিরাজার চুলের মতো অবয়বগুলো অনেকটা প্রোটোফেদার্স নামে এক ধরণের পাখার প্রাথমিক পর্যায়ের গড়নের মতো। এগুলো আসলে চুল ছিল না। এমন গঠন কেবলমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলোর মধ্যেই দেখা যায়। তবে অনেক ডাইনোসরেরই পাখা ছিল। আদতে, প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে পাখাওয়ালা ছোট ডাইনসোর বিবর্তিত হয়েই পাখি সৃষ্টি হয়েছে।
মার্টিল বলেন, কিছুটা দূর থেকে দেখলে সেগুলো অনেকটা চুলের মতোই মনে হয়, পাখা নয়। সম্ভবত, এটার পুরো শরীরজুড়েই চুলের মতো প্রোটোফেদার ছিল। কিন্তু কেবলমাত্র ঘাড়, পেছনের দিক ও বাহুতেই সেগুলো টিকে ছিল। পেছনের দিকেরগুলো বেশ লম্বা ও কিছুটা কেশের মতো ছিল। ডাইনোসরদের মধ্যে এটা একাবারেই অনন্য।
মার্টিল আরো বলেন, উবিরাজারার ফিতা-সুলভ গঠনগুলো হয়তো প্রদর্শনের জন্য ছিল। সম্ভবত, সঙ্গী আকর্ষণ করতে বা শত্রুদের ভয় দেখাতে বা পুরুষ ডাইনোসরদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ব্যবহৃত হতো। সাধারণত পুরুষ প্রাণীদের মধ্যেই এমন অঙ্গ দেখা যায়। যেমন, পুরুষ ময়ূরের লেজে বিস্তৃত পাখনা। এ থেকে মার্টিল ধারণা করছেন, ডাইনোসরটি পুরুষ হতে পারে।
তিনি বলেন, এর কাধ থেকে বের হয়ে আসা ফিতাগুলোর মতো কিছু আমি এর আগে প্রকৃতিতে আর কোথাও দেখিনি। মার্টিল জানান, উবিরাজারা হয়তো দেখতে রঙিন ছিল। তবে তার জীবাশ্ম দেখে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই। সায়েন্সনিউজ অনুসারে, উবিরাজারার জীবাশ্ম নব্বইয়ের দশকে ব্রাজিলের সিয়ারা অঙ্গরাজ্যের এক জাদুঘরে স্থান পায়।