©ক্রাইম টিভি বাংলা অনলাইন ডেস্ক♦
প্যারিসের লিল শহরে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে তখন অসংখ্য মদ তৈরির কারখানা। এই মদ থেকে সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হতো। কিছুদিন যাবৎ সকলেই লক্ষ করছিল কারখানায় প্রস্তুত মদের একটা বিরাট অংশ সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে গ্যাঁজ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এতে শুধু কারখানা মালিক নয়, সরকারেরও ক্ষতি হচ্ছিল। এর কারণ অনুসন্ধানের ভার দেওয়া হয় এক যুবকে উপর।
যুবক একটি মদের কারখানায় গেলেন। সেখানে বড় বড় চৌবাচ্চায় মদ ঢালা হতো। একদিকে থাকত ভালো মদ, অন্যদিকে খারাপ মদ। দুই মদের নমুনা এনে পরীক্ষা করলেন পাস্তুর। দীর্ঘ পরীক্ষার পর লক্ষ করলেন, ভালো মদের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র গোল এক ধরনের পদার্থ রয়েছে (Globules of Yeast nearly spherical) এবং খারাপ মদের মধ্যে লম্বা ধরনের ক্ষুদ্র পদার্থ রয়েছে (Elongated)। পাস্তুর সিদ্ধান্তে এলেন কোনো পারিপার্শ্বিক প্রভাবে গোলাকৃতি পদার্থটি লম্বা আকার ধারণ করছে আর তারই ফলে ভালো মদে গ্যাঁজ সৃষ্টি হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুরু হলো তার গবেষণা। দীর্ঘ দশ বছর সাধনার পর তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে বাতাসের মধ্যে রয়েছে অদৃশ্য জীবাণুর দল, যারা ভালো মদের সংস্পর্শে এসে তার মধ্যে পচন সৃষ্টি করছে। এত দিন ধারণা ছিল এই সমস্ত জীবাণুর জন্ম আপনা থেকে কিংবা অজৈব পদার্থ থেকে হয়। এই প্রচলিত ধারণা ভেঙে তিনি জন্ম দিলেন এক নতুন ধারণার।
পাস্তুর শুধু মদ বিনষ্টের কারণ যে ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণু তার স্বরূপ উদঘাটন করেই ক্ষান্ত হলেন না। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন কীভাবে মদের গুণগত মানের পরিবর্তন না করে তার ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করা যায়। তিনি মদকে বিভিন্ন উত্তাপে গরম করতে আরম্ভ করলেন। অবশেষে লক্ষ করলেন ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে বা ১৩১ ডিগ্রি ফারেনহাইট উত্তাপে মদের কোনো ক্ষতি হয় না, কিন্তু ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস হয়। সেদিনের সেই যুবক লুই পাস্তুর। তাঁর আবিষ্কৃত তথ্য আজ সমস্ত পৃথিবী জুড়ে পাস্তুরাইজেশন (Pasteurization) নামে পরিচিত। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে শুধু যে মদ সংরক্ষণ করা হয় তাই নয়, এতে নানা ধরনের খাবার পানীয় দুধ, ক্রিম সংরক্ষণ করা হয়। যার সুফল আমরা সকলেই ভোগ করছি। কিন্তু অতি সামান্য সংখ্যক মানুষই জানে এ সমস্তই পাস্তুরের অবদান।
লুই পাস্তুর জলাতঙ্ক অ্যানথাক্সের প্রতিরোধক আবিস্কারের জন্য বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি জলাতঙ্ক নিয়ে কাজ করে দেখেন এটি নার্ভাস সিস্টেমের একটি রোগ এবং আক্রান্ত পশুর স্পাইনাল কর্ডের নির্যাস দ্বারা অন্য প্রাণিকে জলাতঙ্কে আক্রান্ত করা যায়। এই পদ্ধতিতে তিনি রোগ প্রতিরোধে অক্ষম র্যাবিস ভাইরাস উৎপাদন করেন, যা জলাতঙ্কের ভ্যাক্সিন হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। ১৮৮৫ সালে পাস্তুর প্রথম এক শিশু বালকের উপর এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করেন। ছেলেটি জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর কামড়িয়েছিল, তারপর ছেলেটির মা তাকে পাস্তুরের গবেষণাগারে নিয়ে আসেন। পাস্তুর ছেলেটিকে ভ্যাক্সিন প্রদান করেন এবং ছেলেটি সুস্থ হয়ে ওঠে।