©ক্রাইম টিভি বাংলা অনলাইন ডেস্ক ♦
নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির দৈন্য প্রকাশ পেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। মহামারী শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙে পড়ে অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসে স্থবিরতা। কর্মহীন হয়ে পড়ে কোটি কোটি মানুষ। বিপুল পরিমাণ মানুষ আয়ের সংস্থান হারানোর কারণে ভোক্তাব্যয়েও ধস নামে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা খাদ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখা নিয়েও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।
কলকারখানার উৎপাদন না হয় একটা সময়ে এসে চালু করা সম্ভব। তাতে মানুষের আয়ের সংস্থানও তৈরি হবে। ফলে তারা ফিরে পাবে ক্রয়ক্ষমতা। কিন্তু ভোক্তারা যে অর্থ দিয়ে খাদ্যপণ্য কিনবেন, সেগুলোর মজুদই যদি না থাকে, তখন কী হবে? দেশজ উৎপাদন দিয়ে চাহিদা মেটানো না গেলে বিদেশ থেকে যে আমদানি করা হবে, সে প্রক্রিয়ায়ও রয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলই যে ভেঙে পড়েছে।
এ চিন্তা থেকেই বিশ্বের শীর্ষ কৃষিজ ভোগ্যপণ্য ক্রেতা দেশগুলো শুরু থেকেই আগ্রাসী আমদানি নীতি গ্রহণ করেছে। জর্ডান রেকর্ড পরিমাণ গমের মজুদ গড়ে তুলেছে। বিশ্বে খাদ্যশস্যটির শীর্ষ ক্রেতা দেশ হলো মিসর। মহামারীর মধ্যে যেন গমের জোগানে ঘাটতি দেখা না দেয়, সে লক্ষ্যে কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তারা। দেশটি চলতি বছরের এপ্রিল থেকে গম আমদানি ৫০ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে।
কেবল জর্ডান বা মিসর নয়। খাদ্যপণ্যের সম্ভাব্য ঘাটতি এড়াতে আগেভাগেই সেগুলো কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব আমদানিকারক দেশই। তাইওয়ান জানিয়েছে, তারা তাদের খাদ্যপণ্যের কৌশলগত মজুদ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
দেশগুলোর এই অগ্রিম ক্রয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া এটাই প্রমাণ করে যে তারা সম্ভাব্য মন্দা পরিস্থিতি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে কতটা মরিয়া। বন্দরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বিশ্ববাণিজ্য গতি হারানোর উদ্বেগ করোনা প্রতিরোধী লকডাউন আরোপের শুরু থেকেই ছিল। এমনিতেই বেশির ভাগ দেশকে তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দেশজ উৎপাদন দিয়ে পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয়। করোনা মহামারী সেসব দেশকে আরো বিপাকে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে দোকানগুলোয় দ্রুত খাদ্যপণ্য শূন্য হয়ে পড়া তাদের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভবিষ্যৎ জোগান নিয়ে এ অনিশ্চয়তা ক্রেতাদের ক্রয়ের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছে। ব্যাংক অব আমেরিকার বিশ্লেষকরা বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্রেতারা এখন ‘জাস্ট-ইন-টাইম ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট’-এর পরিবর্তে ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের জন্য মজুদ রাখার নীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে ভবিষ্যৎ সরবরাহ সংকটের আশঙ্কায় তারা অনেক বেশি পণ্য মজুদ করে রাখছেন।
জাতিসংঘের অধীনস্থ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আব্দুলরেজা আব্বাসিয়ান বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস সাপ্লাই চেইনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন আশঙ্কায় কিছু দেশ আগে থেকেই খাদ্যপণ্য ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছে।’
মিসর ও পাকিস্তানের মতো কিছু দেশ কৌশলগত মজুদ বাড়ানোর অংশ হিসেবে আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু দেশ আবার অভ্যন্তরীণ সরবরাহের ঘাটতি ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তুরস্ক ও মরক্কোয় বাজে ফলন দেশ দুটিকে আমদানি বাড়াতে বাধ্য করেছে।
ক্রেতা দেশগুলো আমদানি বাড়িয়ে দেয়ায় উৎপাদকদের লাভ হয়েছে। কারণ মহামারীর মধ্যে যখন পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল, তখন খাদ্যপণ্য রফতানি কমে গিয়েছিল। দেশগুলো পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমদানি বাড়ানোয় উৎপাদকরা এখন লাভের মুখ দেখছেন। সুইজারল্যান্ডে ফুড কনগ্লোমারেট আর্চার-ড্যানিয়েলস-মিডল্যান্ড করপোরেশনের গ্লোবাল ট্রেড ডেস্ক জানিয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকটা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো কেটেছে। প্রতিষ্ঠানটির চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার রে ইয়ং বলেছেন, ‘কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের অবস্থা কেমন থাকবে, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় কেউই। এ কারণে দেশগুলো তাদের খাদ্যপণ্যের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ ব্লুমবার্গ