©ক্রাইম টিভি বাংলা অনলাইন ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের প্রতিযোগিতায় অন্যতম প্রভাবশালী পক্ষ সৌদি আরব। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে এর আগে একাধিকবার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সৌদি আরব জ্বালানি তেলের মূল্যযুদ্ধে জড়িয়েছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ গত মার্চে সৌদি-রাশিয়ার মধ্যকার মূল্যযুদ্ধ। তবে কখনই এর ফলাফল রিয়াদের জন্য লাভজনক হয়নি। মূল্যযুদ্ধের জের ধরে জ্বালানি তেলের দরপতন ঠেকাতে পরবর্তী সময়ে সৌদি প্রশাসনকে উদ্যোগী হয়ে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তবে অতীতের এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়নি সৌদি আরব। ফলে দেশটি নতুন করে মূল্যযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে একদিকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ওপেক প্লাস জোটের আওতায় দরপতন ঠেকাতে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাস চুক্তি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে সৌদি আরব।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যযুদ্ধের অন্যতম অস্ত্র হলো জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়ানো কিংবা কমিয়ে দেয়া। উত্তোলন কমালে সরবরাহ কমে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে। আর উত্তোলন বাড়ালে দেখা দেয় দরপতন। মোটাদাগে উত্তোলন বাড়ানো-কমানোর মাধ্যমে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য পরিবর্তনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টাই মূল্যযুদ্ধের মূলকথা। ২০১৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত এমন মূল্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে জ্বালানি তেলের উত্তোলন ও সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড দরপতন ঘটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সৌদি আরবের নেতৃত্বে এগিয়ে আসে ওপেক। রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ওপেক প্লাস জোট জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন সীমিত রাখতে চুক্তি করে। এর জের ধরে ধীরে ধীরে বাজার ভারসাম্য ফিরতে শুরু করে। বাড়তে থাকে জ্বালানি তেলের দাম।
চলতি বছরের শুরু থেকে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নিয়ে আসে। মার্চ নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়িয়ে নতুন মূল্যযুদ্ধ শুরু করে সৌদি আরব ও রাশিয়া। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শূন্য ডলারের নিচে নেমে যায়। আর্থিক লোকসানের মুখে ফের বাজার ভারসাম্য ফেরাতে তত্পর হয় সৌদি আরব ও রাশিয়া।
যতবারই জ্বালানি তেলের মূল্যযুদ্ধ হয়েছে, ততবারই আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে সৌদি আরব। করোনা মহামারীর মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য ফিরিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন সীমিত রাখার বিকল্প নেই। অথচ ঠিক উল্টোপথে হাঁটছে রিয়াদ। জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতা বাড়াতে চাইছে সৌদি আরামকো।
সম্প্রতি সৌদি আরামকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমিন নাসের বলেন, করোনাকালে ভীষণ রকমের অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে সৌদি আরামকো। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যয় কমানো ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানো।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালে ব্যয় কমানোর পাশাপাশি আগামী দিনগুলোয় আয় বৃদ্ধিতে নজর দেবে সৌদি আরামকো। এজন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন সক্ষমতা (ম্যাক্সিমাম সাসটেইনেবল ক্যাপাসিটি) ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করা হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এটা করা হবে।
শুধু তা-ই নয়, ওপেকভুক্ত দেশগুলোকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর জন্য গোপনে চাপ দিচ্ছে রিয়াদ। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ওপেক প্লাস জোটের চুক্তি বহাল থাকা সত্ত্বেও এমন নীতির পেছনে সৌদি প্রশাসনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। তবে এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ফের দরপতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। যা সৌদি আরবকে ফের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। এজন্য বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেল খাতে আগের মূল্যযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়নি সৌদি আরব।
অয়েলপ্রাইসডটকম অবলম্বনে