দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য নয়: সালমান এফ রহমান
©ক্রাইম টিভি বাংলা ডেস্ক:
সরকারি সুবিধা ও প্রণোদনার ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি। বলেন, এমনকি শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিও সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কর্তৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের গতি প্রবাহে কোভিড-১৯ এর প্রভাব : সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি, মার্কিন ডেপুটি চিফ অব মিশন জোআন ওয়াগনার, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ডিসিসিআই-এর জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট এনকেএ মবিন। ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ ওয়েবইনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বডির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক একটি বৈঠকে এই বিষয়টি উঠেছিল যে বি ও সি ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারীরা কিছু সুবিধা ও প্রণোদনা ভোগ করেন, যেগুলো এ ক্যাটাগরির অর্থাৎ শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পায় না। তখন প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, কেন এমনটা হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিতি অর্থ সচিব বলেছিলেন যে, আগামী অর্থবছর থেকে তারাও এই সুবিধা পাবে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আগামী এক মাসের মধ্যে সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন অর্থ সচিব। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি, দেশি বিনিয়োগের ওপরও সমান গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি আরো বলেন, সকলের জন্য কর হার কমাতে সরকার কর জাল অ রো বিস্তৃত করতে চায়। ‘দূর্ভাগ্যজনকভাবে, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপি ও ট্যাক্সের অনুপাত বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম, এমনকি পাকিস্তানের চেয়েও কম। যেটা ঘটছে তা হলো- যেসব মানুষ ইতিমধ্যেই ট্যাক্স পরিশোধ করছে, আমরা তাদের ওপরই নতুন বোঝা চাপাই। তাই আমাদের আয়করের জাল বিস্তৃত করতে হবে। ইতিমধ্যেই এনবিআর কয়েকদিন আগে ঘোষণা দিয়েছে যে সঠিকভাবে ট্যাক্স আদায়ের জন্য নতুন ভ্যাট মেশিন ইতিমধ্যেই আমদানি করা হয়েছে।’
বিশ্বব্যাংকের ‘ব্যবসা সহজীকরণ’ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বের মধ্যে একটি গুরুতর উপলব্ধি এসেছে যে আমাদের সংস্কার করতে হবে। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। মনোভাবে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন যারা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন, তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।’
এছাড়া বেসরকারি খাতের মানসিকতাও পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নয়, বরং সেখানকার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরাই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, সহজেই পরিবর্তনীয় বিধিবিধান পরিবর্তনের পর সরকার এখন আইনি সংস্কারে নামতে চায়। ব্যবসা সহজীকরণের জন্য দেশের দেউলিয়া আইন পরিবর্তন ও নতুন কোম্পানি অ্যাক্ট প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। তার ভাষ্য, ‘আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী যে, আগামী বছরের অক্টোবরে যখন নতুন র্যাং কিং প্রকাশিত হবে, তখন বাংলাদেশের অবস্থান ডাবল-ডিজিটে উন্নীত হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি ও মার্কেট ক্যাপিটাইলেজেশনের অনুপাত বিশ্বে অন্যতম সর্বনিম্ন। তিনি এক্ষেত্রে সিকিউরিটি স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন নেতৃত্বকে ‘সাহসী পদক্ষেপে’র জন্য ধন্যবাদ জানান, যার কারণে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, ‘অতীতে স্টক মার্কেটকে জুয়ার ক্যাসিনো হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে শিক্ষিত। মানুষ এখন সঠিক স্টক বেছে নিচ্ছে। যখনই কোনো সন্দেহ দেখা যাচ্ছে, তখনই নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সময় মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে। এছাড়া যেসব ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে চায়, কমিশন থেকে দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘসূত্রিতার পুরোনো দিন এখন আর নেই।’
বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, জাপানি বিনিয়োগকারীর বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী এবং ২০১৯ সালে এশিয়াতে জাপানি বিনিয়োগ ছিল ৫৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশে ০.০৯% জাপানিজ বিনিয়োগ এসেছে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর ভিত্তিক অর্থনীতি এবং এশিায় অঞ্চলে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে জাপানের পক্ষ হতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন জোঅ্যান ওয়াগনার বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জালানি খাতে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে এবং কোভিড-১৯ এর কারণে ডিজিটাল অর্থনীতি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বায়ো-টেকনোলোজি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কাজ করতে পারে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সময়োপযোগী সহায়ক নীতিামালা প্রণয়ন ও সংস্কার, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আরো শক্তিশালীকরণের উপর জোরারোপ করেন।